জাহিদুল হত্যা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতাকে দায়ী
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (পারভেজ) ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা জড়িত।
রাকিবুল বলেছেন, পারভেজের ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন রাকিবুল ইসলাম।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম।
তবে রাকিবুলের এ অভিযোগকে ‘ঘৃণ্য মিথ্যাচার’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের ফেসবুক পেজে রাকিবুলের এ অভিযোগের বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘এক মৃত ব্যক্তির লাশকে ব্যবহার করে ছাত্রদল যে নোংরামি করছে, তা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাম্য নয়।’
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২২) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আজ ওই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে রাকিবুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের অপকৌশল অনুসরণ করে বৈষম্যবিরোধী নেতারা দীর্ঘদিন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে তারা নানা ষড়যন্ত্রের কৌশল অবলম্বন করেছে। পারভেজের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড পেজ থেকে অশোভনীয় ভাষায় যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, এর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) অভিযুক্তদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করতে পারত। কিন্তু তা না করে অশোভন ভাষায় আক্রমণ এবং তদন্তের আগেই অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়া প্রমাণ করে তারা অপরাধ আড়াল করতে বিশ্বাসী।
পারভেজকে হত্যার ঘটনায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মেহরাজ ইসলামকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, মামলার বাকি আসামিরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ (তুষার), যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজী, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অপর দুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা আবু জর গিফারি ও মাহাদী হাসান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সবার সঙ্গে সমতা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিভিন্ন সময় দফায় দফায় আলোচনা করলেও ছাত্রদলের মতো বৃহৎ এবং জুলাই আন্দোলনে সর্বাধিক শহীদের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেনি। বিভিন্ন ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। প্রশাসনে এখনো হাসিনার প্রেতাত্মারা লুকিয়ে আছে। আর এদের উৎসাহ ও আশ্রয় দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা, বিভিন্ন ঘটনায় যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বনানী থানায় গিয়েও বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কাদের নামে মামলা হবে, সেই তালিকা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। মূল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য তাঁরা বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করছে বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, সে কারণে তাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের চেইন অব কমান্ড নেই। তারা সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে মব জাস্টিসের সূচনা করে দেয়।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় অভিযোগ এসেছে। একটি অভিযোগের কোনো বিচার হয়নি। তারা দায় স্বীকার করেনি। তবে ছাত্রদল সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে সামান্য অভিযোগ পেলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, সহসভাপতি এইচ এম আবু জাফর, ইজাজুল কবির, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হুরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।